আধুনিক পদ্ধতিতে আর্সেনিক পরীক্ষা | Arsenic Testing by Modern methods
এলিট ক্যাম্পাসের নতুন সিরিজে সকলকে স্বাগতম। আজকে জানাতে চেষ্টা করব কিভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে আর্সেনিক পরীক্ষা করা হয়। চলুন প্রথমেই জেনে নেই আর্সেনিক আসলে কি। আর্সেনিক হলো সাদা রঙ বিশিষ্ট একটি অর্ধ ধাতব পদার্থ। এটির মাত্রা সাভাবিক অবস্থায় পরিবেশে কোনো প্রভাব ফেলে না। তবে কোন অবস্থায় মাত্রা বেড়ে গেলে তখন এটি পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে দাড়ায়। আর্সেনিকের মাত্রা অতিরিক্ত বৃদ্ধি মানুষকে মৃত্যুঝুকি বাড়ায়। এর প্রধান কারণ আমাদের অনেকের বাড়িতে টিউবওয়েল অথবা নলকূপ রয়েছে। দেশের একটা বড় অংশ বিশেষ করে শহরাঞ্চল এবং কিছু কিছু গ্রামাঞ্চলে মানুষ পানির জন্য নলকূপের উপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে আর্সেনিকের মাত্রা ৮০ শতাংশ। আর্সেনিক যুক্ত পানি ব্যবহারের ফলে ত্বকে নানা রকম সমস্যা সৃস্টি হয়। এছাড়া অতিরিক্ত আর্সেনিকের সংস্পর্শে ক্যান্সারের মত মরণব্যাধি ও হতে পারে। তাই নলকূপ বা টিউবওয়েল বসানোর সময় অবশ্যই পানি ভালোভাবে পরীক্ষা করা জরুরী।আর্সেনিকের প্রভাব:
প্রাকৃতিকভাবে পরিবেশে ঘটে। আমরা সাধারণত আমরা যে বাতাসে শ্বাস নিই, যে পানি পান করি এবং আমরা যে খাবার খাই তাতে অল্প পরিমাণে গ্রহণ করি। মানুষ কিছু মানবসৃষ্ট পণ্যের মাধ্যমে আর্সেনিকের সংস্পর্শে আসতে পারে। বেশিরভাগ মানুষের জন্য, খাদ্য হল আর্সেনিকের সবচেয়ে বড় উৎস, যদিও এর বেশিরভাগই কম বিপজ্জনক, জৈব আকারে হতে পারে। খাবারে আর্সেনিকের সর্বোচ্চ মাত্রা সকল প্রকারে সামুদ্রিক খাবার, চাল, অন্যান্য চালের পণ্য, মাশরুম এবং পোল্ট্রিতে পাওয়া যায়, যদিও কিছু ফলের রস সহ অন্যান্য অনেক খাবারেও আর্সেনিক থাকতে পারে।ভাত বিশেষ উদ্বেগের কারণ এটি বিশ্বের অনেক অংশে খাদ্যের একটি প্রধান অংশ। প্রায় সব চালের পণ্যে অন্তত কিছু আর্সেনিক পাওয়া গেছে, যদিও মাত্রা ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। পানি আর্সেনিক এক্সপোজার একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্ভাব্য নিয়ন্ত্রণযোগ্য উৎস। চীন, তাইওয়ান, বাংলাদেশ এবং পশ্চিম দক্ষিণ আমেরিকার কিছু অংশে, পানিতে প্রাকৃতিকভাবে উচ্চ মাত্রার আর্সেনিক পাওয়া যায় এবং আর্সেনিক এক্সপোজারের একটি প্রধান উৎস হতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঞ্চলের পানি, বিশেষ করে পশ্চিমে, প্রাকৃতিকভাবে আর্সেনিকও রয়েছে। পানিতে আর্সেনিকের উচ্চ মাত্রা সহ বেশিরভাগ মার্কিন অঞ্চলগুলি গ্রামীণ সম্প্রদায়। পানিতে প্রাকৃতিক আর্সেনিকের মাত্রা বেশি থাকে যা ভূ-উৎস থেকে আসে, যেমন কূপ, হ্রদ বা জলাধারের মতো পৃষ্ঠের উত্স থেকে পানির বিপরীতে।
অতীতে অনেক কীটনাশক ও হার্বিসাইডে আর্সেনিক ছিল একটি সাধারণ উপাদান। যারা এই পণ্যগুলি তৈরি, পরিবহন, প্রয়োগ বা আশেপাশে কাজ করেছেন তারা উচ্চ স্তরের আর্সেনিকের সংস্পর্শে এসেছেন। অজৈব আর্সেনিক যৌগগুলি ১৯৯৩ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কীটনাশকগুলিতে ব্যবহার করা হয়নি, এবং জৈব যৌগগুলি ২০১৩ সাল থেকে কীটনাশকগুলি থেকে পর্যায়ক্রমে বাদ দেওয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন:
আজ কর্মক্ষেত্রে আর্সেনিকের সংস্পর্শ এখনও কিছু পেশায় ঘটতে পারে যেগুলি আর্সেনিক ব্যবহার করে, যেমন তামা বা সীসা গলানো এই কর্মক্ষেত্রের এক্সপোজার সীমিত করার জন্য প্রবিধান রয়েছে।
আর্সেনিকের বর্তমান বা প্রাক্তন শিল্প বা কৃষি উত্সের কাছাকাছি বসবাসকারী লোকেরা ধোঁয়া শ্বাস নেওয়া বা দূষিত খাবার খাওয়ার মাধ্যমে উচ্চ স্তরের সংস্পর্শে আসতে পারে।
শিল্প ভবন যেমন কাঠ সংরক্ষণকারী এবং কাচের কারখানা কাছাকাছি বায়ু, মাটি এবং জল দূষিত করতে পারে। গন্ধের কাছাকাছি, বা খামারের মাঠ বা বাগানের কাছাকাছি যেখানে আর্সেনিক কীটনাশক ব্যবহার করা হয়েছিল, সেখানেও মাটি দূষিত হতে পারে।
জীবাশ্ম জ্বালানি (যেমন কয়লা) এবং তামাক পোড়ানোও বাতাসে অল্প পরিমাণ আর্সেনিক ছেড়ে দিতে পারে। কিছু আর্সেনিক যৌগ, যেমন ক্রোমেটেড কপার আর্সেনেট (সিসিএ), কাঠকে পচা এবং পোকামাকড় থেকে রক্ষা করতে সংরক্ষণকারী হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। CCA চাপ-চিকিৎসা কাঠের জন্য ব্যবহৃত হত যা কিছু বাড়ির ভিত্তি, ডেক, বেড়া, এবং অন্যান্য কাঠামোতে বহু দশক ধরে ব্যবহৃত হত। আর্সেনিক-সংরক্ষিত কাঠের করাতের মধ্যে শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে বা এই কাঠ পোড়ানোর ধোঁয়া নিঃশ্বাসের মাধ্যমেও মানুষ আর্সেনিকের সংস্পর্শে আসতে পারে।
আধুনিক পদ্ধতিতে কিভাবে আর্সেনিক পরীক্ষা করা হয় চলুন জেনে নেই
প্রয়োজনীয় উপাদান:
১. পানির নমুনা সংগ্রহ
২. টেস্টটিউব
৩. কীট (As-1 এবং As-2)
৪. টেস্টিং স্ট্রিপ
কার্যপদ্ধতি:
⮞⮞প্রথমে টেস্টটিউবে ১০০ মি.লি. অথবা টেস্টটিউবের নির্দিস্ট লেভেলের সমপরিমাণ পানি নিতে হবে। এরপর এই টেস্টটিউবের পানিতে টেস্টিং কীট যথাক্রমে As-1 এবং As-2 যোগ করতে হবে।⮞⮞এবার আলতোভাবে টিউবটি নাড়াতে হবে যাতে কীট পানির সাথে পুরোপুরি মিশে যায়।
⮞⮞এখন একটি টেস্টিং স্ট্রিপ টিউবের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে টিউবের মুখটি বন্ধ করে রাখতে হবে। স্ট্রিপ প্রবেশ করানোর সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন স্ট্রিপে পানি লেগে ভিজে না যায়।
⮞⮞স্ট্রিপ প্রবেশ করানোর পর ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।
⮞⮞২০ মিনিট পর টিউবের মুখটি খুলে স্ট্রিপটি আলতো ভাবে বের করে আনতে হবে।
⮞⮞এখন আর্সেনিকের মাত্রা নির্ধারণ করার জন্য কালার চার্টের সাথে স্ট্রিপটি মিলিয়ে দেখতে হবে।
ফলাফল:
স্ট্রিপটি লক্ষ্য করলে দেখা যায় স্ট্রিপের মাথায় কালার পয়েন্ট রয়েছে। এটি পরীক্ষা করার পূর্বে প্রথম অবস্থায় সাদা বর্ণের থাকে। পরীক্ষা করার পর কালার চার্টের সাথে স্ট্রিপটি মিলিয়ে আর্সেনিকের মাত্রা নির্ধারন করা হয়। কালার চার্ট টি লক্ষ্য করলে দেখা যায় ০ থেকে ০.০৫ পর্যন্ত কোনো কালারের সাথে মিল পাওয়া গেলে আর্সেনিকের মাত্রা সাভাবিক বলে ধরা হয়। এর নীচে ০.১০ থেকে ০.৫০ পর্যন্ত বিপদজনক বা অতিরিক্ত মাত্রা হিসেবে ধরা হয়। এক্ষেত্রে ট্রিপটি গাড় বাদামী রঙ ধারণ করে।সতর্কতা:
⮞⮞পরীক্ষা করার সময় প্রয়োজনে মাস্ক পরে নিতে হবে যাতে কোনো পদার্থ হাতে না লেগে যায়। হাতে লাগলে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।⮞⮞পরীক্ষা করার পর কীট মিশ্রিত পানি যেখানে সেখানে না ফেলে নির্দিস্ট স্থানে ফেলতে হবে। যাতে পশু পাখির সংস্পর্শে না আসে।
আর্টিকেল সম্পর্কিত যেকোনো মতামত আমাদেরকে জানাতে কমেন্ট করুন অথবা Contact us পেইজটি ফলো করুন। তথ্য ও প্রযুক্তির নানা খবরাখবর জানতে এবং নতুন কিছু শিখতে আমাদের সাথেই থাকুন।