অনার্স ২য় বর্ষ | বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস-১ | প্রশ্ন ও উত্তর পর্ব-৩

অনার্স ২য় বর্ষ | বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস-১ | প্রশ্ন ও উত্তর পর্ব-৩


অনার্স বাংলা বিভাগের ধারাবাহিক পর্বে  আজকের বিষয় অনার্স ২য় বর্ষের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস-১

প্রশ্ন তালিকা:

১। সান্ধ্য ভাষা কাকে বলে? সংক্ষেপে আলোচনা কর ।

২। ভারতচন্দ্রকে কেন নাগরিক বৈদগ্ধের কবি বলা হয়?

৩। চৈতন্য চরিতামৃত' কী? সংক্ষেপে উল্লেখ কর।

৪। বাংলা সাহিত্যের যুগবিভাগ বলতে কি বুঝ? যুগবিভাগ সম্পর্কে পণ্ডিতের অভিমত পর্যালোচনা কর।

৫। চর্যাপদের ভাষা কি বাংলা? যুক্তিসহ তোমার মতামত তুলে ধর।


✅ সান্ধ্য ভাষা কাকে বলে? সংক্ষেপে আলোচনা কর ।

উত্তর : ভূমিকা : বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাসে 'চর্যাপদ' অতি আদরণীয়। কিন্তু এ বিষয়ে আজ সর্বজনস্বীকৃত যে, চর্যাপদের সাহিত্যিক মূল্য না থাক, চর্যাপদের ভাষাটি বড় কঠিন। সেই ভাষা অনুধাবনের বাধা চর্যাপদের রস গ্রহণের প্রধান অন্তরায় । চর্যাপদের এই দুর্বোধ্য ভাষার নাম 'সন্ধ্যাভাষা'। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

সন্ধ্যাভাষা : যে ভাষা রহস্যময় এবং যা বুঝতে কষ্ট হয় অথবা যার অর্থ সাম্যক ধ্যানের দ্বারা বুঝতে হয় তাই 'সন্ধ্যাভাষা' । চর্যাপদের ভাষাতে এই অস্পষ্টতা; কিছু বোঝা যায় কিছু বোঝা যায় না। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তাই ঠিকই বলেছেন চর্যাপদের ভাষা ‘সন্ধ্যাভাষা'। সন্ধ্যাবেলার আলো আঁধারিতে যে রহস্যময়তা সেই পরিচয়ের আলো অন্ধকারে 'চর্যাপদ' অস্পষ্ট চর্যাপদের পদগুলো ছিল মূলত বৌদ্ধ সহজিয়াদের সাধন পদ্ধতিমূলক গান। তারা সাধনা করতেন গোপন তত্ত্বের। সে তত্ত্বগুলো তারা কবিতায় গেঁথে দিয়েছিলো, যাতে সাধক ছাড়া কেউ এর মর্মার্থ বুঝতে না পারে। মূলত অন্য সম্প্রদায়ের ব্যক্তি যারা সহজিয়া বৌদ্ধদের প্রতি প্রসন্ন ছিল না তাদের রক্তচক্ষু থেকে এই গূঢ় ধর্মাচারকে আড়াল করার কৌশল হিসেবে বৌদ্ধতান্ত্রিক সিদ্ধাচার্যেরা এই সন্ধ্যাভাষার ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ধর্মকে যখন আত্মবোধের প্রয়োজনে নিয়োগ করা হয় তখন তা ভাবময় 'রহস্যময়' কাব্যময় রূপ গ্রহণ করে । তাই চর্যাপদ ধর্মগ্রন্থ এবং এর ভাষা আলো অন্ধকারে আচ্ছন্ন হলেও তাতে সাহিত্যিক গুণের অভাব নেই ।


✅ ভারতচন্দ্রকে কেন নাগরিক বৈদগ্ধের কবি বলা হয়?

উত্তর : ভূমিকা : ভারতচন্দ্র রায় ছিলেন মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ কবি। অন্নদামঙ্গল কাব্য তাঁর শ্রেষ্ঠ সাহিত্য। তিনি ছিলেন নবদ্বীপের কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভাকবি ও সুপণ্ডিত। ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর ছিলেন সংস্কৃত, আরবি, ভাষার পণ্ডিত। তাকে নাগরিক বৈদেগ্ধের কবি বলার কারণ নিম্নে তুলে ধরা হলো-

ভারতচন্দ্রকে নাগরিক বৈদগ্ধের কবি বলার কারণ : ভারতচন্দ্র ছিলেন সমকালীন কবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তাঁর অন্নদামঙ্গল কাব্যে সমকালীন বাঙালি সমাজের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট, মোগল-পাঠান, দিল্লী-কাশী-পুরীসহ ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব ও ঐতিহাসিক যুদ্ধ বা ঘটনা, দেবীও কাব্যে বর্ণিত আধুনিক মানুষের জীবনধারা, আদিরসের প্রাধান্যসহ জীবনমুখী নানা দৃষ্টিভঙ্গি, বাকবৈদগ্ধ গুণাগুণ দেখে তাকে অনেক সমালোচক যথাযথ নাগরিক কবি বলেছেন। কেননা তাঁর কাব্যে কৃষ্ণনগর ও রাজাকৃষ্ণচন্দ্রের রাজ্য বর্ণনা বহুলভাবে এসেছে। তিনি নাগরিক জীবনের অন্তঃসারশূন্যতা অন্নদামঙ্গল কাব্যে তুলে ধরেন। ভারতচন্দ্রের জীবনীকা অনেকে মনে করেন, ভারতচন্দ্র নাগরিক কবি ছিলেন না, তিনি ছিলেন পুরোপুরি গ্রামীণ। কিন্তু জীবিকার সন্ধানে এসে তিনি কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভাকবি হয়ে রাজসভা সবসময় আনন্দমুখর করে তুলতেন। ভারতচন্দ্র ছিলেন কৌতুক রসিক কবি কৃষ্ণনগরে আসার পূর্বে কবি ভারতচন্দ্র ছিলেন বাউন্ডেলে প্রকৃতির। পুনরায় গৃহজীবনে ফিরে এসে কবি জীবিকার সন্ধানে কৃষ্ণ নগরের ফরাসি সরকারের দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর কাছে এলে তিনি তাকে কৃষ্ণনগরে রাজসভায় স্থান দেন। তখন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র তাকে মূলাজোড় গ্রাম দান করেন। অতঃপর এখানে কবি শান্তিপূর্ণভাবে জীবনযাপন করেন। জীবনের সঙ্গে কাব্যের যোগ অস্বীকার করা যায় না। কবি ভারতচন্দ্রের জীবন নগর-লালিত এ ধারণার বশবর্তী হয়ে তাঁর বাগ্‌বৈদগ্ধ্যে ও আদিরসের প্রাধান্যে অনেকে তৎকালীন নাগরিক রুচির ফল বলে মনে করেন। তিনি নগর লালিত ছিলেন না। কিন্তু তার জীবন থেকে মনে হয় জি ছিলেন প্রখর আত্মসচেতন ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তৎকালীন সমাজে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের কোনো মূল্য না থাকলেও সেখানে কবিকে আপন ইচ্ছায় চলার প্রেরণায় উদ্দীপ্ত হতে দেখা যায়। টানাপোড়েনের মধ্যেও তাঁর অপরিসীম প্রতিভার বিকাশ ঘটে। ভারতচন্দ্রের কারণে দেখা যায় নবজীবনের উল্লাস, "কাব্যসৃষ্টির নতুন প্রেরণা ও উদ্দামতা।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কবি ভারতচন্দ্র ছিলেন যথার্থ আধুনিক। তাঁর কাব্যে আধুনিক শিল্পগুণ পরিপূর্ণ। তাঁর হাতে মঙ্গলকাব্য চরম উৎকর্ষতা লাভ করেছে। কবির অন্নদামঙ্গল কাব্য ব্যঙ্গ, রঙ্গরসে পরিপূর্ণভাবে ভাষায় ও উপমা ব্যবহারে এ কাব্য জনা ভূমিকা পালন করেছে।


✅ চৈতন্য চরিতামৃত' কী? সংক্ষেপে উল্লেখ কর। 

উত্তর : ভূমিকা : মধ্যযুগে শ্রীচৈতনদেবকে ঘিরে বাংলা সাহিত্যে এক ধরনের জীবনীকাব্য রচিত হয়। এ ধরনের সাহিত্যে রীচৈতন্যদেব ও তাঁর শিষ্যদের জীবন কাহিনি স্থান পায়। চৈতন্যদেবের ভক্তরা এ ক্ষণজন্মা মহাপুরুষের জীবনী রচনা করে বাংলা সাহিত্যে এক নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করেন। বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীরা এ ধরনের জীবনী সাহিত্য রচনায় বিশেষ মনোযোগী হয়ে পড়েন।

চৈতন্য চরিতামৃত সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা : বাংলা সাহিত্যে চৈতন্য জীবনীকাব্যের মধ্যে মুরারীগুপ্ত, বৃন্দাবন দাস, লোচনদাস, কৃষ্ণদাস কবিরাজ, জয়ানন্দ দাস, গোবিন্দদাস, চূড়ামনি দাসের নাম উল্লেখযোগ্য। শ্রীচৈতন্যদেবের বাংলা জীবনীকাব্যগুলো মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। এখানে বাঙালির জীবন, সমাজ ও সাধনা সম্পর্কিত অনেক মৌলিক ও ঐতিহাসিক তথ্য বিধৃত আছে। বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যের বিকাশে এগুলো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। চৈতন্যের জীবনীকারদের মধ্যে কৃষ্ণদাস কবিরাজ রচিত ‘শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত' গ্রন্থটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এ কাব্যটিতে পাণ্ডিত্য, মনীষা, দার্শনিকতা ও রসমাধুর্যে অদ্বিতীয় গ্রন্থ। গ্রন্থটি তত্ত্বশাস্ত্র ও ধর্ম শাস্ত্র হিসেবে বেশ উল্লেখযোগ্য। কৃষ্ণদাস কবিরাজ রচিত শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত গ্রন্থে চৈতন্যের মতনীলণ্ড্য চৈতন্যতত্ত্ব, কৃষ্ণতত্ত্ব, ভক্তিতত্ত্ব, সাধ্যসাধন তত্ত্ব, এসব তত্ত্ব স্থান পেয়েছে। কৃষ্ণদাস রচিত চৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থে কবি চৈতন্যজীবনাদর্শ, ভক্তিবাদ, দ্বৈতবাদী দার্শনিক চিন্তার গৌড়ীয় ভাষা এবং বৈষ্ণব মতাদর্শকে সংহত। দূরাভিসারী ও মনননিষ্ঠতা দিয়ে বাঙালি মনীষীর এক উজ্জ্বল আদর্শ চরিত্র হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছেন।

কৃষ্ণদাস ১৬১৫ সালে বৃন্দাবনে আচার্য ও গুরুদের অনুরোধে ‘শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত' কাব্যটি রচনা করেন। চৈতন্যদেবের জীবনের অন্ত লীলা কাণাই কবির প্রধান উদ্দেশ্য। ‘শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত' কাব্যে কৃষ্ণদাস কবিরাজের কবি প্রতিভা ও পাণ্ডিত্যের পরিচয় মেলে। কাব্যটি লিখে তিনি বাঙালি সমাজে অধিক পরিচিত ও সমাদৃত হন। এটি সর্বাপেক্ষা সুলিখিত ও সুপঠিত গ্রন্থ হিসেবে পরিচয় লাভ করে ।

উপসংহার : আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, কৃষ্ণদাস কবিরাজ রচিত 'শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত' গ্রন্থটি বৈষ্ণব বাঙালি সমাজে উপনিষদের মর্যাদা লাভ করে । চৈতন্যজীবনীর চেয়ে বৈষ্ণব ভাবধারা ও দর্শনকে প্রতিষ্ঠা করা এ কাব্যের প্রধান উদ্দেশ্য ।


✅ বাংলা সাহিত্যের যুগবিভাগ বলতে কি বুঝ? যুগবিভাগ সম্পর্কে পণ্ডিতের অভিমত পর্যালোচনা কর।

উত্তর : কালের পরিক্রমায় নিত্য নতুন রূপ ধারণ করেছে হাজার বছরের পুরনো বাংলা সাহিত্য। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের আদি নিবাস চর্যাপদের কাল হতে বর্তমান কাল পর্যন্ত বিস্তৃত। যে সমৃদ্ধ সাহিত্য আমরা পেয়েছি তা যুগে যুগে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও বিদেশি সাহিত্যের প্রভাবে পরিবর্তিত ও সমৃদ্ধ হয়েছে। ফলে এই নিরবচ্ছিন্ন সাহিত্য ধারাকে সুষ্ঠুভাবে ও অনায়াসে আলোচনার জন্য যুগবিভাগ অপরিহার্য । বাংলা সাহিত্যের ঐতিহাসিক বিবর্তনের ধারা অনুসরণ করে একে বিভিন্ন যুগে ভাগ করা হয়েছে।

 বাংলা সাহিত্যের যুগবিভাগ সম্পর্কে পণ্ডিতদের মতবাদ : বাংলা সাহিত্যের অতীত ইতিহাস সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্যের অভাবে যুগ-বিভাগ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। তবে সকল গবেষকই বাংলা সাহিত্যেকে তিনটি প্রধান যুগে বিভক্ত করেছেন- প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগ ।

বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন 'চর্যাপদ'। কিন্তু চর্যাপদের রচনাকাল সম্পর্কে পণ্ডিতগণ ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছেন। যেমন- ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ৬৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে চর্যাপদের রচনাকাল বলে উল্লেখ করেছেন। আবার ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, চর্যাপদ রচিত হয়েছিল ৯৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। এই প্রধান মত ছাড়াও আরো মতভেদ রয়েছে। ফলে বাংলা সাহিত্যের শুরু নিয়ে মতান্তর রয়েছে। তবে বাংলা সাহিত্যের উৎপাদ সম্পর্কে মতভেদ থাকলেও সবাই বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন হিসেবে 'চর্যাপদ'কে স্বীকার করেছেন।

বাংলা সাহিত্যের যুগবিভাগ নিয়ে বিভিন্ন পণ্ডিতগণের মতামত নিম্নে প্রদান করা হলো-

বাংলা সাহিত্যের প্রথম ইতিহাস রচয়িতা পণ্ডিত রামগতি ন্যায়রত্ন ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে 'বাংলা ভাষা ও বাঙালা সাহিত্য বিষয়ক গ্রন্থে বাংলা সাহিত্যের যুগবিভাগ করেছেন-

১. আদৎকাল অর্থাৎ প্রাকচৈতন্য পর্ব ।

২. মধ্যকাল অর্থাৎ চৈতন্যযুগ থেকে ভারতচন্দ্রের পূর্ব পর্যন্ত ।

৩. ইদানীন্তনকাল অর্থাৎ ভারতচন্দ্র থেকে বর্তমান পর্যন্ত ।

তবে তাঁর এ যুগবিভাগ সীমাবদ্ধ বলে অনেকে মনে করেন।

ড. দীনেশ চন্দ্র সেন “বঙ্গভাষা ও সাহিত্য” (১৮৯৬) গ্রন্থে সাহিত্য সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করে বাংলা সাহিত্যকে ৫ ভাগে বিভক্ত করেছেন-

১. হিন্দু বৌদ্ধ যুগ (৮০০-১২০০ খ্রি.)।

২. গৌড়ীয় যুগ বা চৈতন্য-পূর্ব যুগ (১২০১-১৫০০ খ্রি.)।

৩. শ্রীচৈতন্য সাহিত্য বা নবদ্বীপের প্রথম যুগ ।

৪. সংস্কার যুগ।

৫. কৃষ্ণচন্দ্ৰীয় যুগ অথবা নবদ্বীপের দ্বিতীয় যুগ।

তাঁর এ বিভাজন কোথাও ধর্ম, কোথাও ব্যক্তিকেন্দ্রিক হওয়ায় তা যুক্তিযুক্ত নয় ।

ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যকে পাঁচটি যুগে বিভক্ত করেছেন। ১. প্রাচীন বা মুসলমান পূর্ব যুগ (৯৫০-১২০০ খ্রিস্টাব্দ)।

২. তুর্কি বিজয়ের যুগ (১২০০-১৩০০ খ্রিস্টাব্দ)।

৩. আদি মধ্যযুগ বা প্রাকচৈতন্য যুগ (১৩০০-১৫০০ খ্রিস্টাব্দ)।

৪. অন্ত্য মধ্যযুগ-

(i) চৈতন্য যুগ বা বৈষ্ণব সাহিত্য যুগ (-৫০১-১৭০০ খ্রি.)। (i) নবাবী আমল (১৭০১-১৮০০ খ্রি.)।

৫. আধুনিক বা ইংরেজি যুগ (১৮০১-বর্তমান যুগ পর্যন্ত।


✅ চর্যাপদের ভাষা কি বাংলা? যুক্তিসহ তোমার মতামত তুলে ধর।

উত্তর : বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাসে প্রথম নিদর্শনস্বরূপ যে বইটির কথা বলা হয় তা হলো 'চর্যাপদ'। পণ্ডিত মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯০৭ সালে নেপালের রাজগ্রন্থাগার থেকে বেশ কিছু পুঁথি আবিষ্কার করেছিলেন। যেমন- চর্যাপদ ডাকার্ণক, দোহাকোষ । এ সবগুলো পুঁথি মিলিয়ে ১৯১৬ সালে তাঁরই সম্পাদনায় “হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা” নামে গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থের অন্তর্গত সকল গানের ভাষা বাংলা নয়, একমাত্র চর্যাপদের ভাষা বাংলা। চর্যাপদ আবিষ্কারের পর পণ্ডিতদের মধ্যে এর জারা নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। হিন্দি, উড়িয়া, মৈথিলি, অসামিয়া এবং বাংলা ভাষাভাষীরা চর্যাকে স্ব স্ব ভাষার আদিরূপ বলে দাবি করেন। ভাষাবিজ্ঞানীরা চর্যাপদের ধ্বণিতত্ত্ব ও ব্যাকরণের নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে এগিয়ে আসেন।

চর্যাপদের ভাষা বাংলা কি-না সে বিষয়ে যুক্তিখণ্ডন : চর্যাপদের আবিষ্কারক হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যার ভাষাকে বাংলা বলেছেন, তবে তিনি ভাষাতাত্ত্বিক নন, ভাষাবিদদের দৃষ্টিতেও তিনি সংকলনটি বিচার করেন নি। তবে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ Outlines of an Historical Grammer of the Bengali Language শীর্ষক বক্তৃতায় বাংলা ভাষার প্রাচীন রূপ চর্যায় প্রদর্শন করেন। তিনি চর্যার। ভাষাকে প্রাচীন বঙ্গকামরূপী ভাষা বলে মনে করেন। ১৯২৬ সালে ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় তার “বাঙলা ভাষার উৎপত্তি " গ্রন্থে ধ্বণিতত্ত্ব ব্যাকরণ ও ছন্দ বিচার করে সিদ্ধান্ত করেছেন যে, চর্যার পদসংকলনটি আদিম বাংলা ভাষায় রচিত। বাংলা ভাষায় রচিত। কিন্তু হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর সিদ্ধান্ত ভাষাতাত্ত্বিকরা এক বাক্যে মেনে নেন নি। ভাষাতাত্ত্বিক বিজয়চন্দ্র মজুমদার তাঁর হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে, চর্যার পদরচয়িতারা ছিলেন বাঙালি। যদিও অনেকের ভাষার একটু একটু প্রভেদ আছে। তবুও চর্যাপদ Memory of the Bengali Language নামক বক্তৃতামালায় এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ডাকার্ণবকে সংস্কৃত ও প্রাকৃত শ্লোক এবং শাদের অস্তিত্বের মতই আংশিক ও আকস্মিক। উদাহরণস্বরূপ তিনি দেখিয়েছেন ১নং চর্যার চিত্র পইঠো-হিন্দি শব্দ, হাড়িতে ভাত নাহি’ বিশুদ্ধ বাংলা কিন্তু ঐ গানের অপর পদাংশ 'দুহিল দুধু' কথাটি হয় উড়িয়া বা বিহারী, এছাড়া কইসে, জইসা, ভইসে, তাহি দোহা কোষদ্বয়কে হিন্দু ভাষায় রচিত বলে ঘোষণা করেন। তার মতে চর্যার ভাষায় বাংলা শব্দের অস্তিত্ব উড়িয়া বা মৈথিলী এই প্রভৃতি উড়িয়া ভাষারই লক্ষণ। বিজয়চন্দ্র মজুমদার এমনি কিছু শব্দ বা পদ নিয়ে চর্যাপদের ভাষা বিশ্লেষণ করেছেন। 


🔰 পূর্ববর্তী: অনার্স ২য় বর্ষ | বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস-১ | প্রশ্ন ও উত্তর পর্ব-২



Disclaimer: পোস্টটি তৈরি করতে কিছু সহায়ক বইয়ের সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে। তবে তা শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। পোস্ট সম্পর্কে কারো কোনো মতামত বা অভিযোগ থাকলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post